উৎসে মূসক কর্তন (VDS)
সাধারণভাবে সরকারের কাছে মূসক পৌঁছে দেন বিক্রেতা। তিনি যে পণ্যটি ক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন, সেই বিক্রয়মূল্যের মধ্যে ক্রেতা তার উপর মূসক দিয়ে দেন। মাস শেষে বিক্রেতা তার সমুদয় বিক্রয়মুল্যের উপর প্রদেয় মূসক ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রেতাই বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্য কেনার সময় মূসক কেটে রেখে দেন এবং তিনিই তা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেন। এক্ষেত্রে ক্রেতা যেহেতু পণ্য ক্রয়ের শুরুতেই মূসক প্রদান করেন, তাই একে উৎসে মূসক কর্তন বলে।
সরকারী প্রতিষ্ঠান, আধাসরকারী প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী সংস্থা (এনজিও), ব্যাংক, বীমা বা অন্যকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান, লিমিটেড কোম্পানি, ১(এক) কোটি টাকার অধিক বার্ষিক টার্নওভারযুক্ত প্রতিষ্ঠান] এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) উৎসে আদায়/ কর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
০২ । যে সব ক্ষেত্রে উৎসে (মূসক) কর্তন করতে হবে :
(১) ছকে বর্ণিত সেবা সমূহের ক্ষেত্রে উহাদের বিপরীতে উল্লিখিত হারে আবশ্যিকভাবে উৎসে মূসক কর্তন করতে হবে । সেবা প্রদানকারী মূসক পরিশোধ পূর্বক সেবা প্রদান করলে তিনি অনুচ্ছেদ নং-৫(ক) এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরন করবেন ।
(২) ‘যোগানদার’ সেবার ক্ষেত্রে উৎসে মূসক কর্তন : তালিকার ১৮ নং ক্রমিকে বর্ণিত সেবা ”যোগানদার” এর ক্ষেত্রে উৎসে মূসক কর্তন বিষয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে । যোগানদার এর সংজ্ঞা হল যোগানদার অর্থ কোটেশন বা দরপত্রের বা অন্যবিভাগে বিভিন্ন সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী সংস্থা (এনজিও), ব্যাংক, বীমা বা অন্যকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান, লিমিটেড কোম্পানি, ১(এক) কোটি টাকার অধিক বার্ষিক টার্নওভারযুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের নিকট পণ্যের বিনিময়ে করযোগ্য পণ্য বা সেবা বা উভয়েই সরবরাহ করেন এমন কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা যোগানদার সেবার সংজ্ঞায় ”অন্যবিভাগে”শব্দের অর্থ হল যে ভাবেই ক্রয় কবা হোক না কেন, অর্থাৎ নগদে ক্রয় করা হলে বা যেন মূল্যে ক্রয় করা হলে তা যোগানদার সেবার অন্তর্ভুক্ত হবে।তাই এসব ক্ষেত্রে মূসক উৎসে কর্তন করতে হবে । অথবা ক্রয়কারী তার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রযোজ্য মূসক এর অর্থ প্রদান করে সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করবেন । যোগানদারের সংজ্ঞায় ”করযোগ্য পণ্য বা সেবা”সরবরাহকারী অন্ত—র্ভুক্ত করা হয়েছে । এর অর্থ হল - যে পণ্য বা সেবা বা সরবরাহ নেয়া হয়েছে তা করযোগ্য হতে হবে ।
তবে পণ্য বা সেবার করযোগ্য আইনের প্রথম তফসিল ও দ্বিতীয় তফসিল এর ভিত্তিতে নিরুপিত হবে । প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রদত্ত অব্যাহতি কেবল করযোগ্য পণ্য বা সেবার বিভিন্ন পর্যায়ের অব্যাহতি হিসেবে গন্য বিধায় উক্ত পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে মূসক উৎসে কর্তন করতে হবে । মনে রাখতে হবে যে ”যোগানদার” হলো একটি সেবা- করযোগ্য পণ্য বা সেবা সরবরাহকরা সংক্রান্ত সেবা। তাই কোন পণ্যের সরবরাহ ”যোগানদার” হিসেবে পরিচিত হবে কিনা তা অনুধাবনের জন্য নিম্নের বিষয়সমূহ বিবেচনায় আনতে হবে।
(ক) কোন উৎপাদক বা ব্যবসায়ী ১৫% হারে মূসক পরিশোধিত মূসক ১১ চালানসহ পণ্য সরবরাহ করলে উক্ত সরবরাহ ”যোগানদার”সেবা হিসেবে বিবেচিত হবে না বিধায় এরূপ ক্ষেত্রে উৎসে মূসক কর্তন করতে হবে না।
(খ) উৎপাদকের নিকট থেকে বা নির্ধারিত মূল্য সংযোজনের ভিওিতে মূসক পরিশোধকারী ক্ষুদ্র খুচরা ব্যবসায়ীর ব্যতীত অন্যান্য ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ক্রয় করে বা আমদানি করে পণ্য সরবরাহ করা হলে তা যোগানদার হিসেবে বিবেচিত হবে বিধায় এরূপ ক্ষেত্রে মূসক উৎসে কর্তন করতে হবে ।
(গ) যে সকল সেবার সুনির্দিস্ট সংজ্ঞা রয়েছে, যে সকল সেবার সরবরাহ যোগানদার হিসেবে গন্য হবে না ।
(৩) তালিকায় বর্ণিত সেবাসমুহ ব্যতীত অন্য কোন সেবা বা ক্রয়ের ক্ষেত্রে উৎসে মূসক কর্তনে বাধ্যবাধকতা নেই । তবে মূল্য সংযোজন কর আইন,১৯৯১ এর ধারা ৩৭ এর উপ-ধারা (২) এর দফা (ট)অনুসরে প্রযোজ্য মূসক পরিশোধিত হয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীর রয়েছে। তিনি মূসক চালান ,ট্রেজারী চালান,চলতি হিসাব বা অন্য কোন দলিলাদির মূসক পরিশোধিত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হবেন। মূসক পরিশোধিত হয়ে থাকলে উৎসে মূসক কর্তন করতে হবে না। মূসক পরিশোধিত না হয়ে থাকলে প্রযোজ্য মূসক উৎসে কর্তন করতে হবে ।
(৪) বিধি-১৮ঙ অনুসারে উৎসে মূসক কর্তন:
মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা, ১৯৯১ এর বিধি-১৮ঙ অনুসারে সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাইসেন্স প্রদান বা নবায়নকালে উক্তরূপ সুবিধা গ্রহণকারী ব্যক্তির নিকট হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থের ওপর ১৫% হারে উৎসে ভ্যাট কর্তন করতে হবে প্রদত্ত লাইসেন্স,রেজিস্ট্রেশন,পারমিটে উল্লেখিত শর্তের আওতায় রাজস্ব বণ্টন (revenue sharing),রয়্যালটি, কমিশন, চার্জ, ফি বা অন্য কোনোভাবে প্রাপ্ত সমুদয় মূল্যের ওপর উৎসে ভ্যাট কর্তন করতে হবে। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন এবং অন্য কোনো সংযোগ প্রদানকালে সংযোগ ফি’র ওপর উৎসে ভ্যাট কর্তন করতে হবে।
(৫) সেবা আমদানির ক্ষেত্রে উৎসে মূসক কর্তন
যে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার বাহির হতে সেবা সরবরাহ করা হয় এবং বাংলাদেশে সেবা গ্রহণ করা হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান (যারা বিল পরিশোধের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে তারা) প্রযোজ্য হারে ভ্যাট উৎসে কর্তন করবে। কর্তিত মূসক জমাদানের প্রমাণ এবং এবং মূল্য ঘোষনার উক্ত সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকা সাপেক্ষ উক্ত মূসক রেয়াতযোগ্য হবে ।
(০৬) উৎসে মূসক কর্তনযোগ্য কোন সেবা ক্রয়ের বিপরীতে যদি ক্রেতার ব্যাংক অভ্যন্তরীণ ঋণপত্র বা অন্য কোন মাধ্যমে ক্রয়ের পক্ষে মূল্য পরিশোধ করে, তাহলে উক্ত ব্যাংক ক্রেতার পক্ষে প্রযোজ্য মূসক উৎসে কর্তন এবং সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করবে।
০৩। যে সব ক্ষেত্রে উৎসে মূসক কর্তন করতে হবে না
(ক)“ মূসক -১১ ”চালানপত্র বা “মূসক -১১”চালানপত্র হিসেবে বিবেচিত কোন চালানপত্রমূলে উৎপাদক/প্রস্তুতকারক সরাসরি কোনো পণ্য সরবরাহ করলেবা টার্নওভার কর বা কুটির শিল্পের আওতায় তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান তাদের তালিকাভুক্তি নম্বর সম্বলিত ক্যাশমেমোসহ পণ্য সরবরাহ করলে উক্ত সরবরাহ সরবরাহ যোগানদার হিসেবে বিবেচিত হবে না বিধায় উৎসে ভ্যাট কর্তন করতে হবে না।
(খ) গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, মোবাইল ফোন, পানি ইত্যাদি পরিসেবার বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে উৎসে ভ্যাট কর্তন করতে হবে না।
(গ) “বিজ্ঞাপনী সংস্থা” শীর্ষক সেবা প্রদানকারী যে ক্ষেত্রে স্থানীয় মূল্য সংযোজন কর কার্যলয়ের রাজস্ব কর্মকর্তা / সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক প্রত্যয়িত “মূসক -১১” চালানপত্র বা“ মূসক -১১ ”চালানপত্র হিসেবে বিবেচিত কোন চালানপত্র সহ বিল দাখিল করবে সেক্ষেত্রে মূসক কর্তন করতে হবে না।